ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও গাজায় ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেই গত ৬ এপ্রিল বেশ হাসিমুখে রাষ্ট্রীয় সফরে ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর তার মুখে সেই চওড়া হাসি আর থাকেনি। বলতে গেলে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় এক প্রকার খালি হাতেই দেশে ফিরেছেন নেতানিয়াহু।
আমেরিকার প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা পূরণের তালিকায় ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ, সিরিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্কের প্রভাব বৃদ্ধি এবং ১৮ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার উদ্বেগে আশানুরূপ সাড়া দেননি।
সংবাদ সংস্থা এপি তার পর্যবেক্ষণে বলছে, দেখে মনে হচ্ছে, ট্রাম্পের সঙ্গে গত সোমবারের (৭ এপ্রিল) বৈঠক থেকে অনেকটা খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে। ওভাল অফিসে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে নেতানিয়াহু তার বিশেষ অগ্রাধিকার নীতি নিয়ে আলোচনায় ট্রাম্পের পক্ষ থেকে হয় তিরস্কার শুনেছেন, নয় তো তার নীতির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণের কথা শুনেছেন।
অবশ্য গত মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) আইসিসির পরোয়ানাভুক্ত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠককে সফল বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, ‘খুবই ভালো সফর’ হয়েছে। তিনি সব ক্ষেত্রে এই সফরকে সফল বলে দাবি করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তিগতভাবে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল বুঝতে পারছে, এই সফর তাদের জন্য কতটা কঠিন ছিল। ওই সফরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনই ইঙ্গিত দিলেন।
ইসরায়েলের ইয়েদিয়ত আহরোনোত দৈনিকের বিশ্লেষক নাদাভ ইয়াল বলেন, আসলে নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে যা শোনার আশা করছিলেন, তেমনটা তিনি শোনেননি। তিনি বলেন, দুই নেতার মধ্যে মতানৈক্য সত্ত্বেও সফর অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।
নেতানিয়াহু খুব অল্প সময়ের নোটিশে ট্রাম্পের এই মেয়াদে দ্বিতীয়বারের মতো ওয়াশিংটনে ‘তীর্থযাত্রা’ করলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের (পরে অবশ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়) বিষয়ে আলোচনার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বলে আপাতদৃষ্টে মনে হয়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে এমন এক উত্তাল সময়ে তার এই সফর নিশ্চয় কেবল শুল্কে আটকে থাকতে পারে না।
ট্রাম্পের আসকারায় যুদ্ধিবিরতি ভেঙে ইসরায়েল গত মাসে নতুন করে গাজায় নৃশংস ও নির্বিচার হামলা শুরু করেছে। একই সময়ে পরামাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে।
নেতানিয়াহু ও তার ইসরায়েলি মিত্ররা মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ফিরে আসায় বেশ রোমাঞ্চিত ও উৎফুল্ল ছিলেন। কারণ, প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্প তাদের শক্ত সমর্থন দিয়ে গেছেন। এবার ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প ইসরায়েলপন্থী কর্মকর্তাদের তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদেও এনেছেন।
এপির বিশ্লেষণে বলা হয়, ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও তার দ্বিতীয় মেয়াদে নেতানিয়াহুর সঙ্গে সম্পর্কটা হবে বেশ জটিল ও অনিশ্চিত। যেমনটা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী হয়তো প্রত্যাশাও করেননি।


