আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের ৬টি আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ, পোষ্টার, ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেসবুক-টুইটার ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থীতার বিষয়ে জানান দিচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই মাঠ চুষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামীলীগ মাঠে না থাকলেও বিএনপি জামায়াতের পক্ষ থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দলের হাইকমান্ডে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর) আসন : যমুনা বিধৌত কাজিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসনটি গঠিত। এ আসনটিতে বিগত নির্বাচনগুলোতে মূলত আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন শহীদ এম মুনসুর আলী এবং আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের একক নেতৃত্বে এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান ছিল।
এ আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও এবার এ দূর্গ ভাঙ্গতে চায় বিএনপি। বিগত আওয়ামী সরকারের হামলা-মামলা দমন-পীড়নের কারনে দলীয় কর্মকান্ড আনুষ্ঠানিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির জনমত সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তারা। ৫৪ বছরের ইতিহাস পাল্টে দিয়ে তৈরি করতে চান নতুন আরেক ইতিহাস। যা বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে স্থানীয় নির্বাচনে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে তার প্রমাণ রেখেছেন।
এ আসন থেকে কাজিপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আফজাল হোসেন সরকারের জোষ্ঠ্য পুত্র, কাজীপুর আফজাল হোসেন মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও কাজীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি দলীয় কর্মকান্ডের পাশাপাশি এলাকায় গণসংযোগ, মতবিনিময়সহ কেন্দ্রে জোর লবিং চালিয়ে নিজের প্রার্থীতার বিষয়ে জানান দিচ্ছেন।
তিনি ২০২০ সালের উপনির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। সেলিম রেজা বলেন, আওয়ামী লীগের দূর্গের মধ্যে থেকেও বিগত দিনে হামলা-মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েও দলের বিভিন্ন কর্মকান্ডে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে দলীয় সাংগঠনিক অবস্থা ধরে রেখেছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে ৫৪ বছরের ইতিহাস বদলে দিয়ে নতুন আরেক ইতিহাস সৃষ্টি করতে চান। তিনি বলেন, কাজীপুরে দলমত নির্বিশেষে মরহুম আফজাল হোসেনের রয়েছে অসংখ্য ভক্ত – অনুরাগী ও শুভাকাঙ্খী যারা নির্বাচনে তার পক্ষাবলম্বন করবেন। উপরন্ত এলাকায় তার ব্যক্তিগত ক্লীন ইমেজের কারনে সাধারন জনগণের বড় একটা অংশ তাকে সমর্থন করবেন বলে তিনি মনে করেন। এজন্য আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হওয়ার আশাবাদী তিনি।
এছাড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানাও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিগত দিনে হামলা-মামলা, নির্যাতনের শিকার হয়েও দলের দূর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সব সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কাজিপুরে তার জন্মস্থান হওয়ায় তিনি ইতিমধ্যে মনোনয়নের জন্য দলের হাইকমান্ডে জোর লবিংয়ের পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠ চুষে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়, গণসংযোগসহ দলের বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করে সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করছেন। নাজমুল হাসান তালুকদার রানা বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময় দলের কান্তিকালে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়ে একাধিকবার কারাবরণ করেও দলের নেতাকর্মীর পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। তাই আগামী নির্বাচনে দল থেকে তাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনটি আওয়ামী কবল থেকে পুনঃদ্ধার করতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন।
এছাড়া এ আসনে দেশের সুনামধন্য কন্ঠশিল্পী কনক চাপা বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে তার নাম শোনা যাচ্ছে। বিগত ২০১৮ সালের একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
কিন্ত আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে নির্বাচনের মাঠে নামতে দেননি। পরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবারও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী রোমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে তিনি নির্বাচন করবেন। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন তিনি।
কনকচাঁপা বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য পদেও রয়েছেন। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার তাকে তিন বছরের জন্য সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের মেম্বর নিযুক্ত করেছে। কনকচাঁপা বলেন, আমি অবশ্যই নির্বাচন করবো, নমিনেশন কিনবো, দল মনোনয়ন দেবে কিনা সেটা দলের ব্যাপার। ৫ আগস্টের আগে কেউ কোনো কাজ করতে পারিনি। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে আমি কোনো ফোন ব্যবহার করতে পারতাম না। সিমকার্ড ঢোকানোর সঙ্গে সঙ্গে সেটা ব্লক করা হতো।
সব জায়গা থেকে আমাকে নিগৃহীত করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে আমি কাজ শুরু করেছি। এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করে দিয়েছি। আমার বাসাতেও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। এসব বৈঠকে নেতাকর্মীরা আমাকে স্বতস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়েছে। কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জবাসীর সমর্থন এবং দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় আমি নির্বাচনে নিশ্চয়ই অংশগ্রহণ করবো। আমি খুব শিগগিরই এলাকায় ফিরবো। কনকচাঁপা আরও বলেন, “মিথ্যাচার মুক্ত বাংলাদেশ চাই” এ শ্লোগানকে সামনে রেখে আমাদের দেশ গড়ার কাজে অংশ নিতে হবে। এলাকার মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এ জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
কনকচাঁপা ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জের একাংশ) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে ব্যাপক আলোচনা আসেন। তবে রাতের ভোটখ্যাত প্রহসনের নির্বাচন তিনি ভোটের দিনই বর্জন করেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কন্ঠশিল্পী কনকচাঁপা ১৯৬৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ী ইউনিয়নের মাইজবাড়ী গ্রামে। তিনি বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী কনকচাঁপা প্রায় ৪০ বছর ধরে সংগীতাঙ্গনে কাজ করে যাচ্ছেন।
আধুনিক গান, লোকসংগীত, নজরুল সংগীত ও চলচ্চিত্রের গানে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। ৩৫টিরও বেশি একক অ্যালবাম রয়েছে তার। তিনি একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র ও মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি সংগীত শিল্পীর পাশাপাশি একজন লেখক ও চিত্রকর। এখন পর্যন্ত তার ৮টি বই বের হয়েছে। তিনি পত্র-পত্রিকায় কলামও লেখেন।
সংগীতাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র কনকচাঁপা দীর্ঘদিন ধরে মানবিক কর্মকান্ডের সঙ্গেও নিজেকে জড়িত রেখেছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক ও মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন দুঃস্থ অসহায় মানুষের জন্য। তিনি বৃদ্ধাশ্রম ও পথ শিশুদের স্কুল পরিচালনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
এছাড়া এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগসহ বিভিন্ন সভা সমাবেশ, মতবিনিময় ও বিভিন্ন কর্মকান্ড চালিয়ে প্রার্থী হিসেবে নিজেকে জানান দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মোঃ রবিউল হাসান। তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে এসএসসি পাশের পর কলেজে ভর্তি হয়ে দাদার অনুপ্রেরণায় ছাত্রদলের পক্ষে সক্রিয় কর্মকান্ড শুরু করি এবং আর.আই.এম ডিগ্রী কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক নির্বাচিত হই। ১৯৯২ সালে কাজিপুর সরকারী কলেজে ছাত্রদলের পক্ষে ভিপি নির্বাচন করতে গিয়ে ২১ নভেম্বর কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার উপর অতর্কিত হামলা করে আমার দু’টি পা ভেঙ্গে দেয় এবং বাম পা কেটে দ্বিখন্ডিত করে ফেলে। সেই থেকে আমি প্লাস্টিকের কৃত্রিম পা লাগিয়ে চলাফেরা করছি। এছাড়া ২০১০ সালে উপজেলা শ্রমিকদলের মিটিংয়ে আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় আমাকে মারপিট করে আবারও দু’টি হাত ভেঙ্গে দেয়, ভলো ডান পা ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কুপিয়ে মাথা ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। সেই ঘটনায় এখনও মাথায় ৪২টি সেলাইয়ের দাগ রয়েছে। এর আগে ২০০৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার বসত বাড়িতে আগুন লাগিয়ে সব পুড়ে ছারখার করে দেয়। তৃতীয় বার ২০২২ সালে কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল নয়াপাড়া বাজারে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী অতর্কিতভাবে হামলা করে মাথা, হাত ও পা কুপিয়ে মারাত্বকভাবে আহত করে ফেলে রেখে যায়। ২০১৪ সালে আওয়ামী শাসন আমলে যখন কেউ নির্বাচন করতে সাহস পায়নি তখন আমি দলের মনোনয়ন পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছি।
তিনি বলেন, এতো হামলা মামলার শিকার হওয়ার পরেও আমি দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শত বাঁধা উপেক্ষা করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১ কাজিপুর আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে প্রস্তুত রয়েছি। এ্যাড. মোঃ রবিউল হাসান ১৯৭০ সালে ২১ আগষ্ট কাজিপুর উপজেলার বিলদুয়ারিয়া গ্রামের এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবার নাম মৃত আব্দুল মালেক, মাতার নাম মৃত রাবেয়া খাতুন। তিনি ১৯৮৫ সালে এসএসসি পাশ করে আর.আই.এম ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয়ে এইচএসসি পাশ করে ১৯৮৮ সালে কাজিপুর সরকারী কলেজে ডিগ্রীতে ভর্তি হয়ে কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন। ১৯৯১ সালে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯২ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৩-২০০২ সাল পর্যন্ত জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।
২০০৯সালে সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘদিন যাবত দায়িত্ব পালন করেন এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে রাজনীতির পাশাপাশি তিনি আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
এছাড়া এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আব্দুস ছালাম । তিনি বলেন, আমি শহীদ জিয়ার আদর্শের একজন সৈনিক। শহীদ জিয়ার ১৯ দফা ধারণ করে এবং দেশ নায়েক তারেক রহমানের ৩২ দফা বাস্তবায়নে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় অবদান রাখা এবং জাতীয়তাবাদী ঐক্যের ভিত্তিতে গ্রাম গঞ্জে জনগণকে সচেতন ও সুসংগঠিত করে সার্বিক উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা ও প্রকল্প তৈরি করে তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা এবং দক্ষতা জনগণের হাতে পৌছে দেওয়াই আমার মূল লক্ষ্য।এই লক্ষ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১ কাজিপুর আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে কাজ করছি। আব্দুস ছালাম ১৯৬৬ সালে কাজিপুর উপজেলার আলমপুর গ্রামে সমভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবা বাহার আলী ছিলেন একজন শিক্ষক। তিনি ১৯৮১ সালে মেঘাই ই.ইউ.আই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে কাজিপুর সরকারী মুনসুর আলী কলেজ থেকে বানিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করে পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৮৮ সালে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং এ বি.কম এবং ১৯৮৯ সালে একই বিভাগে এম.বি.এস পাশ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় ১৯৯০-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদারবক্স হল ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। ১৯৯১-১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কাজিপুর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০১ সালে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হয়ে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬-২০০৮ সাল পর্যন্ত কাজিপুর পৌর বিএনপির আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পৌর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ২০০৮ সালে কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও ২০১১ সালে কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন । তিনি ২০০১-২০০৩ সাল পর্যন্ত কাজিপুর পৌরসভার প্রশাসক ও ২০১১ সালে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে ২০১৫সাল পর্যন্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২০২২-২০২৩ সালে কাজিপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির ১নং সদস্য ও ২০২৩ সালে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে অদ্যবধি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি বিগত দিনে আওয়ামী শাসন আমলে দায়ের হওয়া ২১টি রাজনৈতিক মামলার আসামী হয়ে ডিটেনসনসহ একাধিকবার কারাবরণ করে জেল খেটেছেন। বর্তমানে তিনি কাজিপুর থানা সদর বিএম কলেজের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষাকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। জামায়াত প্রার্থী: এবার এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠ গোছাচ্ছেন জেলা জামায়াতের আমীর মো: শাহিনুর আলম। ইতিমধ্যে তিনি দলীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি সভা সমাবেশ মাহফিল, মতবিনিময়সহ বিভিন্ন কর্মকান্ড চালিয়ে প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন। কাজিপুরের চরাঞ্চলের দুই-একটা ইউনিয়ন বাদে বাকী সব কয়টি ইউনিয়নে তাদের শক্ত ঘাটি রয়েছে বলে তারা মনে করেন। আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তার প্রমান দিতে চান। দলীয় সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল গোছানোর কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল কমিটি গঠন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জেলা জামায়াতের আমীর মো: শাহিনুর আলম বলেন, আমাদের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে কিছু নেই। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আমাদের ব্যক্তি পর্যায়ের সকল রিপোর্ট কেন্দ্রে রয়েছে। কেন্দ্র যাকে ভাল মনে করবে তাকে মনোনয়ন দিবে। আমরা দলের নির্দেশনা মেনে তার হয়ে কাজ করবো। দল যদি মনে করে আমাকে সিরাজগঞ্জ-১ কাজিপুর আসনে মনোনয়ন দিবে তাহলে এখানে কারো দ্বিমত নেই। দলীয় মনোনয়ন পেলে আগামী নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে প্রতিযোগীতাপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। শাহিনুর আলম ১৯৭৬ সালে কাজিপুর উপজেলার পাইকরতলী গ্রামে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারের জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত মাওলানা ফজলুর রহমান ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। মা শাহার বানু ছিলেন গৃহিনী। তিনি ১৯৯০ সালে দাখিল, ১৯৯৩ সালে আলিম,১৯৯৫ সালে ফাযিল ও ১৯৯৭ সালে কামিল পাশ করেন এবং একই সাথে তিনি ১৯৯৬ সালে বি.এস.এস সম্মান ও ১৯৯৭ সালে এম.এসএস পাশ করেন এবং ২০১৩ সালে এলএলবি পাশ করে কাজিপুর মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে শহরের দারুল ইসলাম একাডেমীতে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রজীবনে তিনি ১৯৮৫ সালে ছাত্রশিবিরে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯৩ সালে শহর শাখা শিবিরের সভাপতি হন, ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে জেলা ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯৬-৯৭ সালে জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত শহর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০০৪ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী, ২০১০-২০১৩ পর্যন্ত জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী এবং২০১৪ থেকে অধ্যবধি জেলা জামায়াতের আমির এবং কেন্দ্রীয় মজলিশের শুরা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিগত ১৫ বছরের তিনি ৮বার কারাবরণ করে ২/৩বছর জেল খেটেছেন। বর্তমানে তিনি সিরাজগঞ্জ দারুল ইসলাম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান, সিমলা ডিগ্রি কলেজ ও দারুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৬৬জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ২০১জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৫জন। সব মিলিয়ে এ আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অংশগ্রহন ও প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক।


