দিনাজপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভারত সরকারের মন্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘দায়িত্বহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সরকার। শনিবার (১৯ এপ্রিল) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম স্পষ্টভাবে বলেন, ভবেশের মৃত্যু নিয়ে ভারতের যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করে চলেছে।
তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুকে ‘হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর সংগঠিত নিপীড়নের ধারাবাহিকতা’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। আমরা এই মন্তব্যকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’
প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো বৈষম্য নেই। সরকার সব ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি, তিনি পূর্বপরিচিত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে নিজেই বাইরে গিয়েছিলেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকেও কেউ কোনো সন্দেহজনক পরিস্থিতির কথা বলেননি।’
তিনি আরও জানান, ভবেশের মৃত্যুর পর তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। সেখানে শরীরে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানার জন্য ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, ‘ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি, এই বিষয়ে যেন কেউ বিভ্রান্তিকর বা উসকানিমূলক বক্তব্য না দেয়।’
এদিকে একই দিন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায়ের অপহরণ ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’
তিনি অভিযোগ করেন, ভবেশের মৃত্যু নিছক একটি ঘটনা নয়, বরং এটি হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নিপীড়নের অংশ। তার দাবি, এর আগের ঘটনাগুলোর অপরাধীরাও এখনও পর্যন্ত শাস্তি পায়নি।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই মন্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ ও ‘দায়িত্বহীন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শফিকুল আলম স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘এভাবে একটি মর্মান্তিক ঘটনার অপব্যাখ্যা করা অনভিপ্রেত এবং সত্যি ঘটনা আড়াল করার মতো কাজ।’
বাংলাদেশ সরকার বারবার বলে এসেছে, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা সচেষ্ট। সরকার বিশ্বাস করে, কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে টার্গেট করে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় না, বরং সবার সমান মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
এই ঘটনায় ভারত সরকারের এমন বক্তব্য নতুন করে কূটনৈতিক সমঝোতায় টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবশ্য ঘটনাটিকে স্বচ্ছভাবে তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সরকার চায়, এই ঘটনা নিয়ে যেন কেউ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে বা ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টির কোনো সুযোগ তৈরি না হয়। এজন্য তারা সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছে।


