রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসরদের সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাÐ চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিমানবন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি জুলহাস মোল্লার বিরুদ্ধে। তার নেতৃত্বে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিংসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে চিহ্নিত দোসরদের অংশগ্রহণ দেখে ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরায় ছাত্র-জনতা হত্যাকান্ডের মূলহোতা হাবিব হাসান, ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক এমপি খসরু চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেনের সক্রিয় কর্মী আরিফ হোসেন মোল্লা, মোস্তাফিজুর রহমান বাদল ও মমিন উল্লাহ খানকে স্থানীয় বিমানবন্দর থানা বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করছেন জুলহাস মোল্লা।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, জুলহাস মোল্লার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে আরিফ হোসেন মোল্লা বিগত হাসিনা সরকারের আমলে ডিএনসিসি ৪৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈমের সহচর হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন। উত্তরায় জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার নেতৃত্ব দেওয়া দুই আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব হাসান ও খসরু চৌধুরীর নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে সক্রিয় ছিলেন আরিফ হোসেন মোল্লা।
এছাড়াও আনিসুর রহমান নাঈমের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সিভিল এভিয়েশনের বিভিন্ন টেন্ডার ও ঠিকাদারি বাগিয়ে নিতেন ধূর্ত আরিফ। চাচা জুলহাস মোল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি হওয়ায় ৫ আগস্টের পর ভোলপাল্টে আরিফ হোসেন মোল্লাকে এখন বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। যা নিয়ে বিব্রত স্থানীয় বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দর থানা বিএনপির এক নেতা জানান, জুলহাস মোল্লার নিজস্ব কোনো কর্মী না থাকায় এখন তিনি আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে মিছিল-মিটিং আর উঠান-বৈঠক করে বেড়াচ্ছেন। বিএনপিতে এসব আওয়ামী দোসরদের অনুপ্রবেশ ঘটিকে বিএনপিকে দুর্বল করতে চান তিনি। তাই দাবি উঠেছে, সময় থাকতে হাইকমান্ডের উচিত জুলহাস মোল্লার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
অন্যদিকে, কথিত এই বিএনপি নেতার আড্ডায় আর রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে অংশ নেওয়া মোস্তাফিজুর রহমান বাদল ও মমিন উল্লাহ খান সম্পর্কে জানা যায়, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে তারা দু’জনই ছাত্র হত্যার ‘কুখ্যাত আসামী’ হাবিব হাসান ও তোফাজ্জল হোসেনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গেলে বাদল এবং মমিন জুলহাস মোল্লার ছায়াতলে আশ্রয় নেন। তারা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান বাদল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী লীগের গুণকীর্তনে সবচেয়ে বেশি সচেষ্ট ছিলেন। এমনকি বিমানবন্দর এলাকায় মোস্তাফিজুর আওয়ামী লীগের সমাবেশে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানানোরও বক্তব্য এসেছে প্রতিবেদকের হাতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিএনসিসি ৪৯ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আনিসুর রহমান নাঈমের ছত্রছায়ায় বিগত ১৬ বছরে রাজধানীর আশকোনা এলাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন মোস্তাফিজুর রহমান বাদল। সেই সঙ্গে এলাকায় তিনি ভ‚মিদস্যু হিসেবে পরিচিত।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ আমলে অর্জিত অবৈধ সম্পদ রক্ষায় কথিত বিএনপি নেতা জুলহাস মোল্লাকে এরই মধ্যে নিজের ব্যবসায়িক অংশীদার করে নিয়েছে মোস্তাফিজুর রহমান বাদল। সেই সুবাদে জুলহাস মোল্লাও বিমানবন্দর এলাকায় বিএনপির বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে বাদলকে জায়গা করে দিতে দেখা যাচ্ছে।
‘কথিত বিএনপি নেতা’ জুলহাস মোল্লার আস্থাভাজন আরেক আওয়ামীদোসর মমিন খান সম্পর্কে জানা যায়, ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত মমিনের তত্ত্বাবধায়নে বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনে পালিত হতো ১৫ আগস্টসহ আওয়ামী লীগের সব ধরনের কর্মসূচি। দক্ষিণখান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ছাত্র হত্যায় পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেনের একনিষ্ঠ কর্মী হওয়ায় সিভিল এভিয়েশন টেন্ডারবাজি ও ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন মমিন। তবে ৫ আগস্টের পর কথিত বিএনপি নেতা জুলহাস মোল্লার হতে বর্তমানে বিএনপিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন মমিনও। এরই মধ্যে প্রতিবেদকের হাত এসেছে মমিন খানের আওয়ামী রাজনীতির একাধিক ছবি।
মমিনের বিরুদ্ধে ছাত্রহত্যায় হাবিব হাসান ও তোফাজ্জল হোসেনকে অর্থায়নের অভিযোগও রয়েছে।এদিকে, আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসরদের বিএনপিতে অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টা ও দলে জায়গা করে দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ভাতিজা আরিফ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান বাদল ও মমিন উল্লাহ খানের আওয়ামী সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত জুলহাস মোল্লা প্রতিবেদককে বলেন, ‘তারা কোন ফাঁকে মিটিং-মিছিলে ঢুকে গেছে তা হয়ত লক্ষ করিনি। এটা সত্য যে ওরা নিজেদের ঠিকাদারি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগ করত। কিন্তু বিএনপির কর্মসূচিতে আমি এদের কখনো আসতে বলিনি।’ এসময় নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে জুলহাস মোল্লা বলেন, ‘ভবিষ্যতে এমনটা যাতে না হয় সে বিষয়ে আমি সতর্ক থাকব।’


