ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পোষ্য কোটা এখনও বহাল রয়েছে। অথচ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কোটা বাতিল ঘোষণা করেছে। এতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার ফলে ন্যূনতম পাস মার্ক পেয়ে ভর্তি হচ্ছেন কোটাধারীরা।
এমনকি পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। ভর্তি পরবর্তী অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে বিপাকে পড়েন এসব শিক্ষার্থীরা। এতে সেশনজটসহ নানা অ্যাকাডেমিক সমস্যার সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ অন্য শিক্ষার্থীদের। এই কোটা বাতিল দাবি দীর্ঘদিন থেকেই জানিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। নিয়মানুযায়ী গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩০ নম্বর পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন পোষ্য কোটাধারীরা। এ ছাড়া ইবির স্বতন্ত্র ‘ডি’ ইউনিটেও পোষ্য কোটায় ন্যূনতম পাস মার্ক ২৪ নম্বর। ফলে অন্য বছরের মতো এ বছরেও ২৪ ও ৩০ নম্বর পাস মার্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন পৌষ্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এভাবেই ভর্তি নিচ্ছে প্রশাসন। এমনকি ন্যূনতম পাস মার্ক না থাকলে ভর্তি কমিটির মিটিং করিয়ে মার্ক কমিয়ে নিজেদের সন্তানদের ভর্তি করানোর অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট পোষ্য কোটায় ভর্তির শর্ত শিথিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বরাবর স্মারকলিপি ও দীর্ঘদিন কর্মবিরতি পালন করেন। এর বিপরীতে পৌষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের দাবি মেনে নেয়নি প্রশাসন। এ ছাড়া শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও শর্ত শিথিলের বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। শর্ত শিথিল ও শুধু পাস মার্কে ভর্তি নেওয়ার কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ভর্তিচ্ছুক সাধারণ শিক্ষার্থীরা।২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে পৌষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য পর্যালোচনায় উঠে আসে বৈষম্যমূলক চিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক শাখা ও আইসিটি সেলের তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান ইউনিটের সর্বশেষ ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর মেরিট পজিশন ছিল ১৮ হাজার ৭৫২তম (গুচ্ছ পরীক্ষার পজিশন)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন। অন্যদিকে একই ইউনিট থেকে ৪৮ হাজার ৫৯৮তম পজিশনে থেকেও পৌষ্য কোটায় ‘প্রথম সারির বিভাগ আইসিটিতে ভর্তি হয়েছেন আরেক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া মানবিক থেকে সর্বশেষ ৬ হাজার ১৩তম পজিশন নিয়ে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন এক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ২৬ হাজার ৮১২তম পজিশন নিয়েও পৌষ্য কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন আরেক শিক্ষার্থী। অনুরূপ ব্যবসায় ইউনিট থেকেও সর্বশেষ ৫ হাজার ৬৬তম পজিশন নিয়ে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে, ১৯ হাজার ৩০০তম পজিশন নিয়েও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হয়েছেন আরেক শিক্ষার্থী। এমনকি অন্য সব কোটার তুলনায় সর্বনিম্ন মার্ক নিয়ে পৌষ্য কোটায় ভর্তি নিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পৌষ্য কোটাকে মেধার অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণ আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, এ পদ্ধতি ২৪-এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলাফলের পরিপন্থী। ২৪ ও ৩০ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি চরম বৈষম্যমূলক। আমরা অনতিবিলম্বে এই কোটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট গণমাধ্যমকে বলেন, জুলাই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তাই কোটা নামক এই বৈষম্য দূর করতে হবে। ‘জিএসটি’ কেন্দ্রীয়ভাবে পৌষ্য কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। যদি পৌষ্য কোটা বাতিল না করে তবে আন্দোলন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেন্দ্রীয় মিটিংয়ে পৌষ্য কোটা না রাখার সুপারিশ ও প্রস্তাব এসেছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদি ‘জিএসটি’ না রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরাও বাতিল করে দেব।


