নন্দী টিভি ডেস্ক: শীতের হিমেল হাওয়ার পরশ গায়ে মেখে চট্টগ্রামে শুরু হলো অমর একুশে বইমেলা। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই মেলা কেবল বইপ্রেমীদের জন্যই নয়, এটি চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের জন্য এক বর্ণিল সাংস্কৃতিক আয়োজন।
শনিবার (১ ফ্রেরুয়ারি) বিকেল ৩টায় নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে মেলার উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ন, গণপূর্ত ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এসময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এবারের মেলায় মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এ আয়োজনে সবাইকে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অনেকেই মুঠোফোন ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। সময়, অর্থ, স্বাস্থ্য সবাই শেষ করছে এর পেছনে। এতে তারা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বই অন্যতম বন্ধু, যা তাদের মুঠোফোন ও মাদকের আসক্তি থেকে বের করে সৃজনশীল মেধাবী প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
মেলায় প্রকাশকরা জানায়, চট্টগ্রামের মানুষ সবসময় মেলাবান্ধব। এখানে মেলা হলে পাঠক ও দর্শনার্থীদের সাড়া থাকে। তবে বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতি এবং মোবাইলের বহুমাত্রিক ব্যবহারের কারণে পাঠকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
তারা জানান, চট্টগ্রামের এই মেলা পাঠক ও প্রকাশকদের জন্য বড় একটি সুযোগ। তবে বইয়ের দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের সংখ্যা কিছুটা কম হতে পারে। তরুণ প্রজন্মকে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে।
কালধারার প্রকাশক কবি শাহ আলম নিপু বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ মেলাবান্ধব। যেখানে মেলা হয় সেটি জমে যায়। সপরিবারে আসে। এবারের বইমেলার স্থাপনা ঠিক আছে। গতবারের সিআরবির ভেতরের দিকে যেসব স্টল ছিল তারা সুবিধা করতে পারেনি। কিছু বই চুরি হয়ে গিয়েছিল। পরিবেশগতভাবে জিমনেশিয়াম মাঠ বইমেলার জন্য বেশি গ্রহণযোগ্য। এবার মেলার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বইমেলা।
তিনি বলেন, বইমেলা হচ্ছে কবি, সাহিত্যিক, লেখক, প্রকাশক ও বইপ্রেমীদের সম্মিলন। সারা বছর যে বই বিক্রি হয় বইমেলাতে তার চেয়ে বেশি হয়।
প্রজ্ঞালোক প্রকাশনের প্রকাশক ও সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি রেহানা চৌধুরী বলেন, এ বছর আমরা গবেষণাধর্মী চারটি বই বের করেছি। আরও কিছু বইয়ের কাজ চলছে। বইমেলায় লোকসমাগম যত হয় বই বিক্রি কিন্তু তেমন হয় না। এক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবকদের উৎসাহ দিতে হবে তরুণদের। যাতে তারা বই পড়ে, বই কেনে।
চট্টগ্রামের পাঠকরা বইমেলা নিয়ে অত্যন্ত উৎসাহী। চট্টগ্রামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সাইদ হোসেন বলেন, বইমেলা মানে আমাদের জন্য এক বিশাল উৎসব। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে আমরা আমরা পছন্দের লেখকদের বই কিনতে পারি।
মাসব্যাপী এই বইমেলায় পাঠকদের জন্য থাকছে সৃজনশীল বই, শিশুতোষ বই, গবেষণাধর্মী বইসহ বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা। মেলায় প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা আসতে পারবেন।
মেলায় নিরাপত্তার জন্য পুরো প্রাঙ্গণ সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে দৃষ্টিনন্দন ‘শহীদ জিয়া স্মৃতি পাঠাগার’।
মাসব্যাপী আয়োজনের মধ্যে থাকছে নজরুল-রবীন্দ্র উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া-কবিতা উৎসব, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন ও নৃত্য প্রতিযোগিতা, দেশাত্মবোধক সংগীত এবং আরও অনেক আয়োজন। মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
এবার বইমেলায় ১ লাখ বর্গফুটের বেশি আয়তনের জিমনেসিয়াম মাঠে সর্বমোট ১৪০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের শীর্ষ প্রকাশনা সংস্থাসহ ১৪০টি স্টল নিয়ে আয়োজন থাকছে মেলায়। এর মধ্যে ঢাকার প্রকাশনা সংস্থা ৪৪টি, চট্টগ্রামের ৭৪টি, ডাবল স্টল রয়েছে ৩৩টি।
ঢাকার আদলে চট্টগ্রামেও বইমেলার সূচনা করার লক্ষ্য থাকলেও নানা কারণে দীর্ঘদিনেও তা হয়নি। বেশ কয়েক বছর পৃথক পৃথক আয়োজনে বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা চট্টগ্রামে বইমেলার আয়োজন করত। পরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে জিমনেসিয়াম মাঠে সম্মিলিত বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন থেকেই সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে প্রতি বছর বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের এই বইমেলা দিনে দিনে শুধু বই বিকিকিনি নয়, এটি চট্টগ্রামের সাহিত্যপ্রেমীদের বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।


